
এইচএম এরশাদ::
উখিয়া টেকনাফে স্থাপিত আশ্রয় ক্যাম্পগুলোতে রোহিঙ্গাদের ব্যবসার আড়ালে সহযোগিতা দিচ্ছে জামায়াতীরা। প্রত্যাবাসনে সরকারি সিদ্ধান্তের বিরোধীতা করে রোহিঙ্গা সমস্যা জিইয়ে রাখতে কতিপয় জামায়াত নেতা ব্যবসার ছদ্মাবরনে এ কাজে নেমেছে বলে জানা গেছে। এতে অর্থ যুগান দিচ্ছে ক্যাম্পের বাইরে বসবাস ও বিদেশে অবস্থানকারী পুরনো রোহিঙ্গা নেতারা। ড্রাগ লাইসেন্সের একাধিক ছায়াকপি প্রদান করে রোহিঙ্গাদের ফার্মেসী ব্যবসা চালানোর সুযোগ করে দিয়েছে টেকনাফের এক জামায়াত নেতা। উখিয়ায় সদ্য নির্মিত জামায়াত নেতাদের মার্কেটে দোকান ভাড়াও দিয়েছে রোহিঙ্গাদের।
জানা যায়, টেকনাফ উপজেলা জামায়াতের সিনিয়র নেতা নুর হোসেন ছিদ্দিক উখিয়ার জামতলা আশ্রয় ক্যাম্পে এক রোহিঙ্গাকে নিজের ড্রাগ লাইসেন্স ভাড়া দিয়েছেন। শরণার্থী আইন অনূসারে রোহিঙ্গারা আশ্রিত ক্যাম্পে ব্যবসা করে রোজি রোজগার করা যেমন অবৈধ, তেমনি তাদের ব্যবসায় সহযোগিতা দেয়াও অবৈধ। এছাড়াও বিভিন্ন ক্যাম্প জুড়ে জামায়াত নেতাদের রয়েছে ড্রাগ লাইসেন্সের ফটো কপি যুক্ত রোহিঙ্গাদের একাধিক ফার্মেসী। নুর হোসেন ছিদ্দিক রুমা ফার্মেসী নামে ওষুধ ব্যবসার ট্রেড লাইসেন্সটি নিয়েছেন হোয়াইক্যং ইউনিয়ন পরিষদ থেকে। পরে এক রোহিঙ্গাকে লাইসেন্সটি ভাড়া দিয়ে ফার্মেসী ব্যবসা চালাচ্ছেন উখিয়ার পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদের এলাকা জামতলীতে। উখিয়ার পালংখালীর জামতলা রোহিঙ্গা বাজার ক্যাম্প-১৫ এ আশ্রিত এক রোহিঙ্গা ক্যাম্প অভ্যন্তরে বিশাল আকারে ফার্মেসী খোলে সেখানে টাঙ্গিয়ে দিয়েছে জামায়াত নেতা নুর হোসেন ছিদ্দিক এর ছবিযুক্ত ট্রেড ও ড্রাগ লাইসেন্সের ফটোকপি। ওই রোহিঙ্গা জানায়, লাইসেন্সেটি মাসিক ভাড়ায় এনে ব্যবসা করছি। সে আরও জানায়, এখানে ফার্মেসী ব্যবসা করার কারণে দায়িত্বরত কিছু কর্মকর্তাকেও ঘুষ দিয়ে বশে রাখতে হচ্ছে।
সূত্রে জানা যায়, মিয়ানমারে নির্যাতনের শিকার রোহিঙ্গারা মানবিক কারণে এদেশে আশ্রয় পেয়ে বেমালুম ভুলে গেছে যে, তারা সাময়িক আশ্রিত মাত্র। বাধাহীন ব্যবসা বাণিজ্য করতে পেরে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে রোহিঙ্গারা। বালুখালী ক্যাম্প অভ্যন্তরে রাখাইন রাজ্যের শহর বলিবাজারের নামে ‘বলিবাজার মার্কেট’ খোলে নির্বিঘ্নে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে আশ্রিত রোহিঙ্গারা। কুতুপালং, বালুখালী, ময়নাঘোনা, হাকিমপাড়া, থাইংখালী, পালংখালী, চাকমারকুল, পুটিবনিয়া, নয়াপাড়া, মুচনী ও শাপলাপুর ক্যাম্পে অন্তত ২০হাজারের বেশী রোহিঙ্গাদের মালিকানাধীন দোকানপাট রয়েছে। অথচ শরণার্থী আইন অনূসারে আশ্রিত উদ্বাস্তুরা আশ্রয় ক্যাম্প বা ক্যাম্পের বাইরে কোন ধরণের ব্যবসা অথবা চাকরি করে নগদ অর্থ কামাই করতে পারেনা। এক ক্যাম্প থেকে অন্য ক্যাম্পে স্বজনদের কাছে বেড়াতে গেলেও ক্যাম্প ইনচার্জের অনুমতির প্রয়োজন পড়ে। সচেতন মহল বলেন, উখিয়া টেকনাফের ৩৪টি আশ্রয় ক্যাম্পে ওই আইনের বালাই নেই। ক্যাম্প অভ্যন্তরে এবং ক্যাম্পের বাইরে রোহিঙ্গারা দোকানপাট খোলে দিব্যি ব্যবসা পরিচালনা করে প্রত্যেহ কামাই করছে হাজার হাজার টাকা। তারা ওপারে (রাখাইন) গিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করাচ্ছে ইয়াবার চালান। সম্প্রতি র্যাব সদস্যরা হোয়াইক্যং ও তুলাতলী এলাকায় অভিযান চালিয়ে তিনলক্ষ ২০হাজার পিস ইয়াবাসহ তিন রোহিঙ্গাকে আটক করেছে। মিয়ানমারে দেশটির সরকার রোহিঙ্গাদের ভোটাধিকার দেবে বলে ক্যাম্পে প্রচার হলেও রোহিঙ্গারা বলছে, পার হয়ে আসতে পেরেছি যখন, রাখাইন রাজ্যে আর ফিরে যাবনা।
অভিজ্ঞজনরা বলেন, রোহিঙ্গারা এদেশে থেকে ইয়াবাসহ বিভিন্ন ব্যবসা বাণিজ্য চালিয়ে কোটিপতি হওয়ার স্বপ্ন দেখছে। তারা স্থাপনীয়দেরও পরোয়া করেনা। পরোয়া করছেনা আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীকেও। রোহিঙ্গাদের কাছে রয়েছে অবৈধ ভারী অস্ত্র। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ক্যাম্প এরিয়ায় কোন ধরণের অভিযানে যাচ্ছে দেখলে মোবাইল ফোনে সতর্ক করে দেয় রোহিঙ্গা দালালরা। সরকার রোহিঙ্গা শিবিরে মোবাইল ফোনের নেটওয়ার্ক বন্ধ করে ভালই করেছিল। রোহিঙ্গাদের ব্যবসা বাণিজ্য, দোকানপাট, অবাধে চলাফেরা, এনজিওতে চাকরি, ক্যাম্প অভ্যন্তরে ঠিকাদারদের বিভিন্ন কাজে দিনমজুরি এবং খোলামেলাভাবে মুঠোফোন ব্যবহারই প্রত্যাবাসনে আগ্রহী না হওয়ার মুল কারণ বলে জানিয়েছেন অভিজ্ঞজনরা। তারা আরও বলেন, রোহিঙ্গারা এভাবে নির্বিঘ্নে ব্যবসা বাণিজ্য পরিচালনা ও স্বাধীনভাবে যত্রতত্র চলাচল করতে পারলে কখনও নিজ দেশে ফিরে যাবার আগ্রহী হবেনা। সূত্র জনকণ্ঠ
পাঠকের মতামত